বর্ষা মানে কেবল আকাশভরা মেঘ, নয়নের কোণে জমে থাকা জল কিংবা জানালার কাঁচে ঝরে পড়া বৃষ্টির রেখা নয়। বর্ষা মানে হৃদয়ের সজলতা, ঐতিহ্যের ঘ্রাণ আর মানবিকতার উন্মেষ। ঠিক তেমন এক আবেগময় দিনে ৪ আগস্ট কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এক অভিনব উৎসব ‘বর্ষায় রোদ্দুর’। সাংস্কৃতিক সৃষ্টিশীলতা আর মানবিক চেতনাকে একসূত্রে গেঁথে এই আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাব, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও ক্লাব উপদেষ্টা মিস রেজিনা সুলতানা এবং নেতৃত্বে ছিলেন ক্লাবের সভাপতি ফেয়ার ইসলাম খেয়া।
এই দিনটি ছিল শুধু উদযাপন নয়, বরং শিক্ষার্থীদের হাতে গড়া স্বপ্ন আর সৃজনশীলতার রঙে রাঙানো এক নিখাদ মানবিক উৎসব। পুরো ক্যাম্পাস যেন রূপ নেয় এক প্রাণবন্ত মেলায়। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি মৌসুমী ফল, খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স দিয়ে সাজানো হয়েছিল স্টলগুলো। প্রতিটি বিভাগ নিজস্ব স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে, যেখানে তারা নিজেদের সৃজনশীলতা, শিল্পচেতনা ও উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ ফুটিয়ে তোলে। এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং নিজস্ব উদ্যোগে আয়োজন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা দেয়।সকাল গড়িয়ে বিকেল দিনভর চলেছে উৎসবের রঙ ছড়ানো। একদিকে ছিল ‘ফল উৎসব’, যেখানে দেশীয় ফলের ঘ্রাণ আর স্বাদে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল পুরো ক্যাম্পাস; অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে ফুটে উঠেছিল সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বৃষ্টি। অসহায়দের জন্য ত্রাণ তহবিল গঠন যেন এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মানবিক জাগরণের নিঃশব্দ অথচ সাহসী ঘোষণা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজনেস স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. জহুরুল আলম ও জয়েন্ট রেজিস্ট্রার এ এস এম জি ফারুক, যাঁরা শিক্ষার্থীদের এই মানবিক ও সৃজনশীল উদ্যোগকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ইঙ্গিত হিসেবে অভিহিত করেন। তারা বলেন, “শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীরা যখন সমাজের জন্য কিছু করে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার আসল সার্থকতা প্রতিষ্ঠিত হয়।” এছাড়াও বর্ষাকালের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তাঁদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইংরেজি বিভাগের প্রধান রেজিনা সুলতানা শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার জন্য গর্ব প্রকাশ করেন এবং তাঁদের মানবিক গুণাবলি বিকাশের ওপর জোর দেন।
এই আয়োজন শুধু বর্ষাকে বরণ করাই নয়, একে পরিণত করেছে একটি সমাজসচেতন সংস্কৃতিমুখী আন্দোলনে। ‘বর্ষায় রোদ্দুর’ হয়ে উঠেছে কেবল একটি অনুষ্ঠান নয় একটি প্রতিজ্ঞা, এক প্রজন্মের মানবিক আলোয় জ্বলে ওঠা দীপ্ত ঘোষণা।