
লেখাঃ সালেহীন চৌধুরী
অন্যান্য এফ.এম.সি.জি (ফাস্ট মুভিং কনস্যুমার গুডস)অথবা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড ব্র্যান্ডের মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডও তৈরী করা সম্ভব। সম্প্রতি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদম শুরুর নিবন্ধন পর্যায় থেকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডার এবং অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী করতে চাইছিলো এবং পুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপারেশনস এবং প্যাটার্ণ আন্তজার্তিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলেই তৈরী করতে চাইছিলো। আমাদের লক্ষ্য ছিলো নামকরন, আবেদনপত্র, ক্যাম্পাস সবকিছুতেই যেন আন্তজার্তিক মানের হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরীর লক্ষ্যে আমাদের প্রাথমিক কাজ ছিলো বেশ কিছু ভিজ্যুয়াল গাইডলাইনস তৈরী করা, কার্যকর আলোচনা ও মত বিনিময় সভার আয়োজন করা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিলো এবং সবকিছুর পাশাপাশি বাংলাদেশী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্র্যান্ড পজিশন নির্ণয় করার জন্য একটা দিনব্যাপী সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। যেহেতু আমাদের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিলো তাই আমাদেরকে ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনের টুল হিসেবে সনাতন প্রচলিত পন্থাই অবলম্বন করতে হচ্ছিলো। ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন অডিওভিজ্যুয়াল, স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারনের বিভিন্ন কার্যকরী অধিক প্রচলিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট, ফেসবুক মার্কেটিং এবং যে সময়গুলোতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে সময়কালে একটিভ কার্যক্রম এবং ব্যাপক প্রচারনার আশ্রয় নিতে হয়েছিলো।
বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ছিলো যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীর নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা হয়েছিলো এবং একই সাথে ক্রেডিট ট্রান্সফার বা স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা হয়েছিলো। নির্দিষ্ট সময় পর পর দেশের নামীদামী বেশ কিছু পত্রিকায় আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং ভর্তির সময়কালে প্রদত্ত স্কলারশিপ সুবিধার প্রচারও ব্র্যান্ড বিল্ডিং এর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত নোটবুক, কলম, ব্যাকপ্যাক, মগ বিতরন করেও একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং এর একটা নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এর মাধ্যমে জনসাধারনকে বিশ্ববিদ্যালয় সপর্কে অবহিত করা সম্ভব হয় এবং এটি অত্যন্ত কার্যক্রী একটি পদক্ষেপ বলে বিবেচিত।
উদাহরণস্বরুপ, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি কোনও গাড়ি থেকে থাকে যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়, সেই গাড়িটি কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মুভিং বিলবোর্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যা কিনা পুরা শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড যেটা তারা বহন করে সেটা থেকেও মানুষ কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ড ইমেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত শিক্ষক, পরামর্শক অথবা এলামনাই যেসকল ব্যাক্তিরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন সেসকল ব্যাক্তিদেরকে অথবা তাদের পোর্টফোলিও হাইলাইটের মাধ্যমে এবং উপযুক্ত বিজ্ঞাপন, প্রচারনার মাধ্যমে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেমন প্রচুর ছাত্রের ভর্তি নিশ্চিত করতে পারবে অপরদিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী করতে সমর্থ হবে।
একটা ব্র্যান্ড বিল্ডিং বা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরীর জন্য একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে কি কি প্রধান বিষয়সমুহকে দিনে দিনে অনুসরন করতে হয় তার দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মানেই তারুণ্য কাজেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় বিবেচনা করতে হয় যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজকাল ক্লাব কালচার বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের এইসব প্রতিযোগীতা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত অন্যন্য ব্র্যান্ডের আধুনিক এবং ব্যাতিক্রমধর্মী বিজ্ঞাপনসমুহের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিজ্ঞাপন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবে বা হচ্ছে সেই বিজ্ঞাপনগুলোকেও আধুনিক এবং ব্যাতিক্রমধর্মী হতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল বিজ্ঞাপন, ভাষার সাথে খাপ খাইয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে এবং অতী চিত্তাকর্ষক প্রচারণার মাধ্যমে সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম, কমন রুম, আর্ট রুম, ল্যাবরেটরি ফ্যসিলিটিসহ অন্যান্য ফ্যাসিলিটিসমুহের প্রচারণা অধিক জরুরী এবং একইসাথে এই আন্তঃ ক্লাব এবং অন্যান্য ফ্যসিলিটিসমুহের আন্তঃ যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের প্রচারণা জরুরী যেন মানুষ ধারণা পেতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি গতানুগতিকতা মুক্ত এবং এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য সব বিষয়েই লক্ষ্য রাখা হয়। পরিশেষে এটাই বলবো যে একটা নিছক ব্র্যান্ডিং এর উদ্যোগ একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে বড় ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না, গুণগত শিক্ষার মান, মানসম্পন্ন শিক্ষকমন্ডলীর সমাবেশ এবং দক্ষ কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক কর্মকর্তাদের আন্তরিক বন্ধন এবং সর্বোপরি সবার আন্তরিক চেষ্টায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সফল ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।